কেউ পড়তো স্কুলে, কেউ কলেজে। একজন সবে চাকরিতে ঢুকেছিলো। মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল শিলিগুড়ির ৫ তরুণের তরতাজা প্রাণ। শূন্য আজ ৫ মায়ের কোল। সোমবার সকাল থেকে ঘটনার কথা জানতেই বহু মানুষ শোকপ্রকাশ করেন সোশ্যাল সাইটে। পরিচিতরা পৌঁছে যান তরুণদের বাড়ির সামনে। রাতে রথখোলায় সুব্রত দাস, বিক্রম দাস, ঋষভ দাস, অর্ঘ্য কুণ্ডুর দেহ পৌঁছাতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিচিত, প্রতিবেশীরা, বন্ধুবান্ধবরা। চোখের জলেই শেষ বিদায় জানান সকলে। তবে এদিন সকাল থেকে ঘটনার কথা শোনার পর অধিকাংশের বক্তব্য ছিল, ‘সতর্ক ও সাবধান থাকলে দুর্ঘটনা হয়তো এড়ানো যেতো’। সোশ্যাল সাইটে শোকপ্রকাশের পাশাপাশি অধিকাংশের বক্তব্য ছিল, তরুণ প্রজন্মকে আরও সচেতন হতে হবে, অভিভাবকদের কথা শোনা উচিত।
১৫ আগস্ট সকালে সুব্রত, বিক্রম, ঋষভ ও মিলনপল্লীর বাসিন্দা রাজ সিং প্রথমে গাড়িতে যায় লাটাগুড়ি। সেখান থেকে রাতে পাড়ায় ফিরে আসে। এরপর অর্ঘ্যকে সঙ্গে নিয়ে ওই রাতেই কার্শিয়াঙের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ৫ জনের মধ্যেই একজন গাড়ি চালাচ্ছিল। কার্শিয়াং থেকে নামার পথ কার্গিলদারার কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৬০০-৭০০ ফুট গভীর খাদে পড়ে যায় তাদের গাড়ি। মৃত্যু হয় ৫ জনের। ঘটনাস্থল থেকে টুকরো টুকরো অবস্থায় গাড়িটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তবে এই ঘটনার পর শহরের তরুণ প্রজন্মকে আরও সতর্ক ও সাবধান থাকার কথা বলছেন বিভিন্ন মহলের মানুষ। সম্প্রতি শহরের রাস্তা থেকে শুরু করে পাহাড়ি রাস্তায় দেখা যায় কিছু তরুণ দ্রুতগতিতে বাইক ও গাড়ি চালাচ্ছে। স্বল্প গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতাতেও গাড়ি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে পাহাড়ে চলে যাচ্ছে। যা খুবই বিপদজ্জনক। অভিভাবকেরা মানা করলেও সেকথা শুনতে নারাজ।
সোমবার রাতে রথখোলায় ৪ তরুণের দেহ পৌছালে শেষশ্রদ্ধা জানাতে সেখানে পৌঁছান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা। তাদের বক্তব্য, শহরের তরুণ-তরুণীদের গাইডেন্স প্রয়োজন। কাউন্সিলিংয়ের দরকার রয়েছে অনেকের। অনেকক্ষেত্রে কেউ অভিভাবকের কথা শুনছেন না। তখন সমাজের অন্যান্যদের দায়িত্ব নিতে হবে তাদের বোঝানোর।
অন্যদিকে দার্জিলিং জেলা লিগ্যাল এইড ফোরামের সেক্রেটারি অমিত সরকার জানান, বিভিন্ন ক্লাব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত নতুন প্রজন্মকে কাছে টেনে নিয়ে সমাজের উন্নতিমূলক কাজে যোগদান করানো। অভিভাবকদের পাশাপাশি গোটা সমাজকে তাদের পাশে দাড়াতে হবে।
বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা জানান তরুণদের এইধরনের মানসিকতার পেছনে গোটা সমাজ দায়ী। তরুণদের কোনো একটা নিয়মের মধ্যে আনতে গেলেই তারা ভয়ানক হয়ে উঠছে। সমাজ একরকম অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে অভিভাবদেরই প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। এই বয়সে তরুণদের মনে স্বাভাবিকভাবেই এক উন্মাদনা জন্মায় তাই যে কোনোসময় ভুল ঘটতে পারে। বাবা-মা কেই সন্তানের আরও কাছে এসে সমস্তকিছু জানতে হবে।
অভিভাবকেরা জানান বাড়ির অভিভাবকদের আরও অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। এখনকার প্রজন্ম ভীষনভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গোটা সমাজেরই কাউন্সিলিং প্রয়োজন, এখন সমাজের অবক্ষয় চলছে।