শিলিগুড়ি, ২৮ মেঃ নারী যেন সন্তানের জন্ম দিয়েই পূর্ণতা পায়। জন্মের পর নিজের সন্তানকে বুকে আগলে রাখতে চান প্রত্যেক মা। কিন্তু সবাই কী চাইলেই তা পারে? হয়তো না।
একদিকে যখন কিডনির সমস্যা নিয়ে ভুগছেন সেই মা। তখনই জীবন যুদ্ধে হাজির করোনা। শিলিগুড়ির এনজেপির ভক্তিনগর এলাকার বাসিন্দা রিঙ্কু সাহা(পরিবর্তিত নাম)। বহুদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। গত তিনমাস আগে শহরের এক নার্সিংহোমে ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। ভেবেছিলেন সন্তানকে নিয়ে এবার নতুন করে স্বপ্ন দেখবেন। কিন্তু সিজার হওয়ার পর থেকেই শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। ডাক্তাররা জানান কিডনি কাজ করছে না। এই অবস্থায় চিকিৎসার জন্য শিশুকে শিলিগুড়িতে নিজের মায়ের কাছে রেখে স্বামী ও পরিবারের আরও দুই সদস্যদের সঙ্গে চেন্নাই চলে যান রিঙ্কু দেবী। সেখানে ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরবেন বলে আশায় ছিলেন। এরইমধ্যে দেশজুড়ে থাবা বসাতে শুরু করলো করোনা ভাইরাস। লকডাউনে আটকে পরলেন সেখানে। এদিকে দুধের শিশু কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে রয়েছে। সাহায্য চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন জানিয়েছিলেন বাড়ি ফেরার এবং শহরবাসী যাতে তার শিশুর পাশে থাকে সেই আবেদনও করেছিলেন।
কিন্তু মা কী তার সন্তানকে ছেড়ে থাকতে পারে? অবশেষে রবিবার কোনওমতে গাড়ি ঠিক করে শিলিগুড়ি ফেরেন রিঙ্কু দেবী। তবে সুস্থ ছিলেন না। ভয় ছিল করোনার। তাই আর নিজের শিশুকে একবার ধরেও দেখেননি। এই ভয় যে সত্যি হবে কে জানতো?
শহরে ফিরতেই তার ডায়ালাইসিসের জন্য পরিবার দৌড়াতে থাকে শহরের নানা নার্সিংহোমে। সেখান থেকে জানানো হয় রোগীর সোয়াব টেস্টের রিপোর্ট লাগবে। এরপরই রিঙ্কু দেবী ও তার স্বামী যান উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানেই ভর্তি নিয়ে নেওয়া হয় তাকে। তারপর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই সেভাবে। নিজের ছোট্ট কোলের শিশুরও খোঁজ নিতে পারেননি সেই মা। বুধবার দুপুরে সোয়াব টেস্টের রিপোর্ট আসতেই কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ে। তা জানতেই ভক্তিনগরে বাড়িতে কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। চোখে জল নিয়েই রিঙ্কু দেবীর দাদা জানান, জন্মের পর থেকে নিজের ছেলেকে একবারও কোলে নিতে পারেনি বোন। এলাকায় ব্যরিকেড লাগাতে গিয়েছিল পুলিশ। তাদের দেখেই অসহায় দাদা দূর থেকেই কাতর আবেদন জানিয়ে বলেন, বোনটার ডায়ালাইসিস করিয়ে দেন স্যার। বেচে যাবে। ওর কিছু হলে ছোট্ট বাচ্চাটার কী হবে? তবে চিকিৎসকদের ধারণা চেন্নাইতে থাকাকালীন সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন মহিলা। ইতিমধ্যেই তাকে মাটিগাড়ার কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিবারের আরো সদস্যদের মধ্যেও করোনা ভাইরাস আছে কিনা তা জানতে সোয়াব টেস্ট করা হবে।
ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত