শিলিগুড়িতে বাবা-মায়ের রহস্য মৃত্যু, উধাও ছেলে

শিলিগুড়ি,২৫ ডিসেম্বর : শিলিগুড়ি পুরনিগমের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাকিমপাড়া, বঙ্কিমচন্দ্র রোড এলাকায় স্বামী-স্ত্রীর কয়েক মাসের ব্যবধানে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিবারের পক্ষ থেকে রহস্যজনক মৃত্যুর অভিযোগ তুলে সঠিক তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।জানা গিয়েছে, ওই এলাকার বাসিন্দা বিমলাংশু সরকার ওরফে বুলু সরকার, তাঁর স্ত্রী গোপা সরকার এবং তাঁদের ছেলে সৌম্যদীপ সরকার একই বাড়িতে বসবাস করতেন। অভিযোগ অনুযায়ী, গত ২৭ অক্টোবর গভীর রাতে বিমলাংশু সরকারের মৃত্যু হয়। কিন্তু সেই সময় পরিবারের অন্য সদস্য বা আত্মীয়দের না জানিয়েই রাতে দেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। পরদিন আত্মীয়দের খবর দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।


এর প্রায় দুই মাস পর, গত ২১ ডিসেম্বর গোপা সরকারেরও মৃত্যু হয়। এক্ষেত্রেও একইভাবে রাত্রির অন্ধকারে কয়েকজন মিলে শেষকৃত্য সম্পন্ন করে এবং পরের দিন বিষয়টি জানাজানি হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। এতে পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ২২ ডিসেম্বর পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়িতে ছেলে সৌম্যদীপ সরকার ও আরও কয়েকজনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে। পরিবারের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে—যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে থাকে, তবে কেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি? কেন কাউকে না জানিয়ে তড়িঘড়ি দেহ দাহ করা হলো? এ বিষয়ে ছেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, গলায় খাবার আটকে যাওয়ার পর হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিবার এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয়। পরিবারের এক সদস্য জানান, মৃত্যুর দিন রাতে প্রায় ১০টা নাগাদ গোপা সরকারের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল এবং বিকেলেও তিনি পাশের দোকান থেকে বাজার করেছিলেন। সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। তাহলে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে কীভাবে মৃত্যু হলো এবং কেন গোপনে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হলো—এই প্রশ্নের উত্তর চান তারা।

পরিবারের দাবি, বিমলাংশু সরকারের শারীরিক অসুস্থতা থাকায় তাঁর মৃত্যু কিছুটা হলেও মেনে নেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু গোপা সরকারের মৃত্যু তারা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। তাদের অভিযোগ, জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে পরিকল্পিতভাবে এই দুই খুন করা হয়ে থাকতে পারে। এর আগেও বৃদ্ধ দম্পতির উপর নানা ভাবে অত্যাচার চালানোর অভিযোগ ছিল বলে দাবি করেন তারা। বৃহস্পতিবার এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে পুনরায় পানিট্যাংকি ফাঁড়িতে গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জমা দেন। দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির দাবিও জানানো হয়। এদিকে, ঘটনার পর থেকে ছেলে সৌম্যদীপ সরকার পলাতক বলে জানা গিয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *