ছোটোবেলায় ঘুম ভাঙতো টয়ট্রেনের ইঞ্জিনের আওয়াজে।বাড়ি ঘেষে ওঠানামা করছে খেলনা গাড়ি এই দৃশ্য প্রতিদিনই দেখতেন পাহাড়ের অদূরে তিনধরিয়া স্টেশন চত্বরের বাসিন্দা সঞ্জীব বাগদাস।আর সেই থেকে স্বপ্ন শুরু।
সঞ্জীব বাগদাসের শৈশবকাল থেকেই স্বপ্ন ছিল টয় ট্রেন নিয়ে কিছু করার।তার বাবা ঠাকুর সিং বাগদাস রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কর্মরত ছিলেন।বাবার হাত ধরে টয় ট্রেনের আটঘাট রপ্ত করেছিলেন।সেই থেকে শুরু হয় তার ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার স্বপ্ন।প্রায় ২০ বছর আগে শুরু হয় তার স্বপ্নের উড়ান।টয় ট্রেনের মডেল তৈরী করার কাজে আজ তিনি পারদর্শী।
মূলত কাঠ, লোহার পাত, তামা, স্টিল দিয়ে তৈরী করেন টয় ট্রেনের স্টিম ইঞ্জিন।বাড়িতে সাজিয়ে রাখার জন্য এবং চলন্ত টয় ট্রেন-দুইই তৈরী করেন তিনি।এক্কেবারে মূল ইঞ্জিনের অবিকল।ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও কোনো ত্রুটি নেই তার শিল্পসত্বায়।একটি ইঞ্জিন তৈরী করতে সময় নেন ৫ দিন।ফ্রেম তৈরির পর চলে তুলির কাজ।যেমনটা ইঞ্জিনের রং, ঠিক তেমনই ফুটিয়ে তোলেন।
এখনও পর্যন্ত হাজারের বেশী মডেল তৈরি করে ফেলেছেন।সবচাইতে বড় ৬ ফুটের স্টিম ইঞ্জিন তৈরী করেছেন তিনি।যার চাহিদা রয়েছে বিশ্বজুড়ে।তার টয় ট্রেনের তৈরি মডেলের ৭৫ শতাংশই বিক্রি হয় বিদেশে।দেশি বিদেশী পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে হয় তাকে।ইউরোপীয় দেশগুলোতে সঞ্জীবের তৈরি মডেলের চাহিদা তুঙ্গে।দার্জিলিং স্টেশন লাগোয়া একটি স্টলে পাওয়া যায় এই মডেল টয় ট্রেন।বর্তমান সময়ে ছোটোবেলার খেলনা গাড়িকে নিয়ে কিছু করার ভাবনাই এখন তার রুটিরুজি।
তবে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কিংবা রাজ্য সরকার তরফে কোনো সম্মান সহযোগিতা বা শিল্পী ভাতা পাওয়ার আক্ষেপ রয়েছে তার গলায়।তবুও সব ভুলে নিজের পেশায় অবিচল তিনধরিয়ার এই শিল্পী।তবে করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ সমস্ত পর্যটক স্থান।এরফলে সমস্যায় পড়েছেন তিনি।
এই শিল্পী দার্জিলিঙয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল।তিনি বলেন,দার্জিলিং এর ঐতিহ্য টয় ট্রেন বেসরকারিকরণ করা হোক কিংবা সরকারের অধীনই থাকুক ঐতিহ্য টয়ট্রেনকে বাঁচানোর যে পরম্পরা চলে আসছে সেইমত চললে টয়ট্রেন দীর্ঘায়ু হবে।তবে বেসরকারিকরণ করে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হলে ট্রয়ট্রেনের ঐতিহ্য আর বেশীদিন থাকবে না।